ফুটবল খেলার সর্বশেষ আন্তর্জাতিক নিয়ম
ফুটবল খেলার আন্তর্জাতিক নিয়ম
- মাঠ নির্বাচন: ফুটবল মাঠ অবশ্যই আয়তাকার হতে হবে। আন্তর্জাতিক ম্যাচের জন্য মাঠের দৈর্ঘ্য সর্বোচ্চ ১১০ মিটার (১২০ গজ), সর্বনিম্ন ১০০ মিটার (১১০ গজ) এবং প্রস্থ সর্বোচ্চ ৭৫ মিটার (৮০ গজ), সর্বনিম্ন ৬৪ মিটার (৭০ গজ) হতে হবে।
মাঠের স্পটগুলো (টাচলাইন, গোললাইন, মধ্যরেখা, মাঝখানের বৃত্ত, পেনাল্টি স্পট, কর্নার নেওয়ার জায়গা ও ফ্ল্যাগ পোস্ট) অবশ্যই পরিষ্কারভাবে দৃশ্যমান হতে হবে।
গোলপোস্টে দুটি বারের দূরত্ব ৭.৩২ মিটার (আট গজ) এবং উচ্চতায় ২.৪৪ মিটার (আট ফুট)। - বল নির্বাচন: গোলাকার বলের পরিধির মাপ সর্বোচ্চ ৭০ সেন্টিমিটার হতে হবে, সর্বনিম্ন ৬৮ সেন্টিমিটার। ম্যাচ শুরুর সময় বলের ওজন সর্বোচ্চ ৪৫০ গ্রাম, সর্বনিম্ন ৪১০ গ্রাম। কোনো সময় বল নষ্ট হয়ে খেলা বন্ধ হয়ে গেলে সেখান থেকে খেলা আবার শুরু হবে বল ড্রপিংয়ের মাধ্যমে।
- খেলোয়াড় ও খেলোয়াড়দের সাজ-পোশাক: দুই পক্ষের খেলোয়াড়সংখ্যা ১১ জন করে মোট ২২জন হতে হবে। প্রত্যেক খেলোয়াড়ই জায়গা পরিবর্তন করতে পারবেন। এমনকি গোলরক্ষকও স্টপেজ টাইম নিয়ে জায়গা পরিবর্তন করে খেলতে পারবেন। খেলা শুরু করতে প্রতি দলে কমপক্ষে সাতজন করে খেলোয়াড় মাঠে থাকতে হবে। প্রতি দলের খেলোয়াড়দের নির্দিষ্ট জার্সি, শর্টস, মোজা, শিন গার্ড, বুট পড়তে হবে এবং গোলরক্ষকদের সাজ-পোশাক হবে আউটফিল্ডের খেলোয়াড়দের চেয়ে আলাদা।
- রেফারি ও সহকারী রেফারি: ম্যাচের শুরু থেকে শেষ বাঁশি বাজানোর আগ পর্যন্ত রেফারির হাতেই থাকবে ক্ষমতা। রেফারীর সিদ্ধান্তই চুড়ান্ত। সহকারি রেফারিগণ কর্নার কিক, থ্রো-ইন, অফসাইডের সিদ্ধান্ত দিয়ে মূল রেফারিকে সাহায্য করবেন। যদিও মূল রেফারির বাঁশিই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবে।
- হলুদ কার্ড: মূল রেফারি সাতটি কারণে কোনো খেলোয়াড়কে হলুদ কার্ড দেখাতে পারেনঃ
- অখেলোয়াড়োচিত আচরণের জন্য
- অশোভন শব্দ কিংবা আচরণের জন্য
- খেলার নিয়মের বিরুদ্ধাচরণ করলে
- আবার খেলা শুরু করতে দেরি করলে
- প্রতিপক্ষের কর্নার কিক বা ফ্রি-কিক নেওয়ার সময় নির্দিষ্ট দূরত্বে দাঁড়ানোর রীতি মানতে না চাইলে
- রেফারির আদেশ ছাড়া মাঠের বাইরে থেকে ভেতরে ঢুকলে
- অনেকটা ইচ্ছাকৃতভাবে মাঠের বাইরে চলে গেলে।
- লাল কার্ড: মূল রেফারি ছয়টি কারণে কোনো খেলোয়াড়কে লাল কার্ড দেখাতে পারেনঃ
- গুরুতর ফাউল করলে।
- কাউকে হিংস্রভাবে আঘাত করলে।
- প্রতিপক্ষের কোনো খেলোয়াড় কিংবা রেফারিকে থুথু দিলে।
- প্রতিপক্ষের গোল মেনে না নিলে অথবা হাত দিয়ে গোল করার চেষ্টা করলে।
- অসম্মানজনক বা অশ্লীল মন্তব্য করলে।
- একই ম্যাচে কোনো খেলোয়াড়কে প্রথম হলুদ কার্ডে দেখানোর পর দ্বিতীয়বার হলুদ কার্ড দেখানো হলেই তা লাল কার্ড দেখানো বলে বিবেচিত হবে।
- ম্যাচের আয়ু: ম্যাচের প্রতি অর্ধেই নির্ধারিত সময় ৪৫ মিনিট করে ম্যাচের মোট সময় ৯০ মিনিট। তবে খেলোয়াড়দের ইনজুরির কারণে, খেলোয়াড়রা ইচ্ছাকৃতভাবে সময় নষ্ট করলে কিংবা বদলি খেলোয়াড় মাঠে নামতে নষ্ট হওয়া সময় হিসাব করে রেফারি অতিরিক্ত সময় নির্ধারণ করতে পারেন। তবে অমিমাংশিত খেলার ফলাফল নিশ্চিত করা জরুরী হলে সে ক্ষেত্রে ৯০ মিনিটের পর আরো ৩০মিনিট সময় বাড়ানো হয়। তাতেও খেলা নিঃষ্পত্তি না হলে টাইব্রেকারের মাধ্যমে খেলার ফলাফল নির্ণয় করা হয়।
- ম্যাচ শুরু এবং আবার শুরু : পয়সা দিয়ে টস করা হয় প্রথমে, যারা জিতবে তারা মাঠের একটা অর্ধ পছন্দ করে নেবে আর যারা হারবে তারা কিক-অফ করবে। রেফারির বাঁশির মাধ্যমে খেলা শুরু হবে এবং কিক-অফের সময় প্রতিপক্ষের প্রত্যেক খেলোয়াড়কে কমপক্ষে বল থেকে ১০ গজ দূরে দাঁড়াতে হবে।
- বল মাঠের ভেতর-বাইরে: ম্যাচ চলাকালে বল মাঠের ভেতরে থাকলে রেফারি খেলা বন্ধ করবেন না। বল সাদা রঙের টাচলাইন বা গোললাইনের পুরোপুরি বাইরে চলে গেলে(গড়িয়ে বা উড়ে) সেখান থেকে আবার খেলা শুরু হবে থ্রো-ইন, গোল কিক অথবা কর্নার কিকের মাধ্যমে(অতিক্রম করা লাইন ভেদে)। বলের একটু অংশও যদি টাচলাইন বা গোললাইনের মধ্যে থাকে, তখন বলটা মাঠের বাইরে ধরা যাবে না, খেলা চলতে থাকবে।
- গোল হওয়া: বল মাঠে কিংবা বাতাসে পুরোপুরি গোললাইন (ক্রসবারের নিচে সাদা রঙের লাইন) অতিক্রম করলেই গোল হবে, যদি রেফারি অন্য কোনো সমস্যা না দেখেন।
- অফসাইড: অফসাইড মানে প্রতিপক্ষের অর্ধে প্রতিপক্ষের সব খেলোয়াড়ের (গোলরক্ষক ছাড়া) পেছনে থাকা। তবে বল যতক্ষণ না তাঁর পায়ে যাচ্ছে, ততক্ষণ ওই খেলোয়াড় অফসাইডের ফাঁদে পড়বেন না। ধরুন, একজন খেলোয়াড় প্রতিপক্ষের শেষ ডিফেন্ডারের সঙ্গে একই লাইনে কিংবা তাদের আগে দাঁড়িয়ে আছে, এ অবস্থায় তাঁর সতীর্থ একটা থ্রু-পাস বাড়াল এবং সতীর্থের বল ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দৌড় শুরু করে যদি তিনি প্রতিপক্ষের সবাইকে ছাড়িয়ে বল ধরে গোলমুখের দিকে যান, সেটা অফসাইড হবে না। কারণ, তাঁর সতীর্থ বল ছাড়ার সময় তিনি অনসাইডেই ছিলেন। আবার ধরুন, একজন খেলোয়াড় পেনাল্টি বক্সের বাইরে ডানদিকে অফসাইডে দাঁড়িয়ে আছেন কিন্তু আক্রমণ হচ্ছে বাঁ দিক দিয়ে, তখন তিনি অফসাইডের ফাঁদে পড়বেন না। কারণ, দলের আক্রমণে তাঁর কার্যকর ভূমিকা নেই। আবার অফসাইডে দাঁড়ানো কোনো খেলোয়াড় বল ছাড়াই যদি পরোক্ষভাবে আক্রমণে অংশ নেন কিংবা অংশ নেওয়ার মতো অবস্থানে থাকেন, তখন রেফারি অফসাইডের বাঁশি বাজাতে পারেন। তবে ‘একটিভ প্লে’ দিয়ে অফসাইড ধরা খুব কঠিন কাজ।
- ফাউল ও মন্দাচরণ: কোনো খেলোয়াড় প্রতিপক্ষের কাউকে লাথি, ধাক্কা অথবা বেপরোয়া হয়ে অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ করলে তাঁর বিরুদ্ধে ফাউলের বাঁশি বাজাবেন রেফারি। বাজেভাবে ট্যাকল, ইচ্ছাকৃতভাবে বল হাত দিয়ে আটকালে কিংবা সময় নষ্ট করলেও ফাউল হবে।
- ফ্রিকিক ও ইনডিরেক্ট ফ্রি-কিক: ‘বিপজ্জনকভাবে খেলা’ বা ‘শরীর দিয়ে প্রতিপক্ষের কোনো খেলোয়াড়ের গতিরোধ করা’র অপরাধে ইনডিরেক্ট ফ্রি- কিকের বাঁশি বাজাতে পারেন রেফারি। এ কিক দ্বিতীয় কোনো ব্যক্তির স্পর্শ ছাড়া গোলে ঢুকলে সেটা গোল হবে না, এ জন্যই এটা ইনডিরেক্ট।
- ডিরেক্ট ফ্রিকিক: ডিরেক্ট ফ্রিকিকে দ্বিতীয় কোনো খেলোয়াড়ের স্পর্শের প্রয়োজন নেই, বল সরাসরি গোলপোস্টে আশ্রয় নিলেই গোল। অসতর্কভাবে পা চালানো, বেপরোয়া হয়ে খেলা এবং অতিরিক্ত শক্তিপ্রয়োগ করা, মূল এ অপরাধ তিনটি। তবে স্থান-কাল- পাত্রভেদে এসব বিবেচনা করে রেফারি ডিরেক্ট ফ্রি-কিকের বাঁশি বাজাতে পারেন। বল নিয়ে আক্রমণে ওঠা এক খেলোয়াড়কে প্রতিপক্ষের কেউ বেপরোয়াভাবে পা চালিয়ে কিংবা তাঁর জার্সি টেনে ধরে তাঁকে আটকানোর চেষ্টা করলে তখনই রেফারি ডিরেক্ট ফ্রি-কিকের বাঁশি বাজান।
- পেনাল্টি কিক: এটাও একটা ডিরেক্ট ফ্রি-কিক, তবে পেনাল্টি স্পট থেকেই কিকটা নিতে হয়। বল পেনাল্টি বক্সের ভেতর না বাইরে, তা বিবেচনায় আনার প্রয়োজন নেই, ফাউলটা পেনাল্টি বক্সে হলো কি না এবং তা কতটা গুরুতর, সেসব বিবেচনা করেই পেনাল্টির সিদ্ধান্ত দেন রেফারি।
- থ্রো-ইন: যে জায়গা দিয়ে বল টাচলাইন বা সাইডলাইনের বাইরে চলে যাবে, সেখান থেকেই থ্রো-ইন করতে হবে। দুই পা মাটিতে রেখেই এবং মাথার ওপর থেকেই বল থ্রো করতে হবে। যেদলের খেলোয়াড়ের স্পর্শে বল বাইরে যাবে তার বিপক্ষ দল থ্র-ইন করার সুযোগ পাবে।
- গোল কিক: অ্যাটাকিং দলের কারো পায়ে লেগে বল ডিফেন্ডিং দল গোললাইন অতিক্রম করলে তখনই গোল কিক পাবে। নিজেদের পেনাল্টি বক্সের ভেতর থেকেই তারা গোলে কিক নেবে এবং কিকটি অবশ্যই পেনাল্টি বক্স অতিক্রম করতে হবে। গোল কিক থেকেও সরাসরি গোল হতে পারে।
- কর্নার কিক: ডিফেন্ডিং দলের কারো পায়ে বা শরীর স্পর্শ করে বল তাদের গোললাইন অতিক্রম করলে অ্যাটাকিং দল কর্নার কিক পাবে। কর্নার কিক নেওয়ার সময় প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়দের অন্তত ১০ গজ দুরে থাকতে হয়।
- বদলি খেলোয়াড়: খেলোয়াড় আহত, ক্লান্ত বা দলের কৌশলগত বা দলের অন্য প্রয়োজনে ম্যাচ চলাকালীন বদলি খেলোয়াড় নামানোর আইন রয়েছে, এক্ষেত্রে প্রতি ম্যাচে সর্বোচ্চ ৩ জন বদলি খেলোয়াড় নামতে পারবেন।
▪️ফুটবলের ফিফার নিয়মগুলোঃ
বর্তমান খেলার নিয়মাবলীতে (এলওটিজি) সতেরোটি পৃথক আইন রয়েছে, প্রতিটি আইন বিভিন্ন নিয়ম এবং নির্দেশাবলী নিয়ে গঠিত:[১]
- আইন ১: খেলার মাঠ
- আইন ২: বল
- আইন ৩: খেলোয়াড়
- আইন ৪: খেলোয়াড়ের সাজ-সরঞ্জাম
- আইন ৫: রেফারি
- আইন ৬: অন্যান্য কর্মকর্তা
- আইন ৭: খেলার সময়কাল
- আইন ৮: খেলা শুরু এবং পুনঃ শুরু
- কিক-অফ এবং ড্রপ-বল অন্তর্ভুক্ত, খেলা পুনরায় আরম্ভের অন্যান্য পদ্ধতিগুলি অন্যান্য আইনের আওতাধীন।
- আইন ৯: বল খেলার ভিতরে এবং বাইরে
- আইন ১০: ম্যাচের ফলাফল নির্ধারণ করা
- আইন ১১: অফসাইড
- আইন ১২: ফাউল ও অসদাচরণ
- আইন ১৩: ফ্রি কিক
- আইন ১৪: পেনাল্টি কিক
- আইন ১৫: নিক্ষেপ
- আইন ১৬: গোল কিক
- আইন ১৭: কর্নার কিক
No comments
Thank you for comment.